দীন-ই-ইলাহিঃ গৌতম দাস









দীন-ই-ইলাহি


চল্লিশে পা দিতে না দিতেই

যাঁকে আর আকৃষ্ট করছিল না নবতম

দুর্গজয়লব্ধ পঞ্চদশীর সতীচ্ছদ ভেদের উত্তেজনা

তিনি আর কেউ নন,

মোঙ্গল চেঙ্গিশ খাঁয়ের বংশধর

তিনি তুর্কি তৈমুর লঙের নাতির নাতির পুত্

কী অদ্ভুত! কী অদ্ভুত!

হ্যাঁ, হিন্দুস্থানের মাটি এমনই

চিত্রকর দাসোয়ান্তের ছেঁড়া আলখাল্লা পরে

সংশয় কুয়াশার চাদরে মুখ ঢেকে

বাঁ-পায়ে একটু খুঁড়িয়ে হাঁটেন তিনি জনারণ্যে একা

আগ্রার বাজার, মথুরা উপবন, প্রয়াগ, বৃন্দাবনে

প্রাসাদের কোণে প্রিয় বন্দুক ‘সংগ্রাম’ একেবারে চুপ্

হাতি ‘হাইউ’ ভুঁই-এ শুয়ে

দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ-কথা ভাবে, আর

প্রিয়তম ঘোড়া ‘হয়রান’ ঠকঠক করে পা ঠোকে কেবল

ইতিবৃত্ত পথে

ওরা বোঝে না কিছুতে

পথে

বিবিধ হাওয়া অনুভূত হয় যে

হাওয়া মিশুকে হাওয়া মিথ্যের

সঙ্গে ঘোরে, আবার

সত্যের সঙ্গেও তার মতের

খুব মিল। জালালের ঘোর কেটে যায়

দেখেন, ১৫৭৮-এর শীত গ্রীষ্ম তাঁকে

পেরিয়ে গিয়েছে পায়ে হেঁটে।

১৫৮৪-র বর্ষাকালে

চারদিন একটান বর্ষণের পর

এক রৌদ্রকরোজ্বল সকালে তিনি

খুলে দিলেন কারাগার ও চিড়িয়াখানার দ্বার।

আর, পরের একদিন ফতেহপুরের কাছে

পরিত্যক্ত এক গোরস্থানে তিনি দেখলেন

একটি শ্বেত মাজার

শ্যাওলা-ধরা চৌবাচ্চায় জমে আছে জল

ওজু করলেন কত বছর পর!

জলে যখন মুখ ধুচ্ছেন, নিজের ছায়ার সঙ্গে

তিনি আবিষ্কার করে ফেললেন

আরও এক ছায়ার বিস্তার

হ্যাঁ, এ ভাবেই

খ্যাপা দিনুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো তাঁর

খ্যাপা দিনু, আউলিয়া নিজামুদ্দিন চিস্তি

কোনরূপ খেউড় ছাড়াই যিনি বলে উঠলেন

জালালুদ্দিন নও তুমি

১৪-ই শাবান, হিজরা ৯৪৯

উমরকোটের জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ, তুমি

বদর-উদ্-দিন্ মহম্মদ আকবর ...

তুমি জানো, হাওয়া অস্থির হাওয়া মিশুকে খুব

হাওয়া মিথ্যের সঙ্গে ঘোরে, আবার

সত্যের সঙ্গেও তার অবাধ কারবার ...

অতঃপর, তিনি স্ব-প্রশ্নে বললেন

কোন্ পথে যাবে তুমি? ... যাও

যে পথে তোমার পটভূমি।।

থরথর কেঁপে উঠলো পায়ের তলার মাটি

রক্তশূন্য মুখ

মহামতির ঘুম

পেলো না কোনোমতেই

সেই থেকে, মহামতির দুই চোখ জাগরণ-উন্মুখ

তিনি মাঝেমধ্যেই যমুনার তীরে

ধোপাদের ঝুপড়িতে উঁকি দেন চাঁদের মতই

তো, উদ্যান প্রান্তে

অন্ধ--লোলের ছদ্মবেশে মালীদের কুঁড়েপাড়ায়

ঘুরঘুর করেন

আজও, এই আশায় যে

কোনো নারী বা শিশু তাঁকে না-চিনেই

ভালোবাসবে

 



No comments

Powered by Blogger.