মনুষ্য পুত্রন-এর কবিতাঃ অনুবাদ প্রবুদ্ধসুন্দর কর
প্রমাণ
লোকগুলো বলছিল
এইমাত্র নাকি
ফাঁকা মাঠ জুড়ে দেখা গেল
চটিজুতো ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে
আর কোনও প্রমাণের জন্যে
ফিরে তাকাতে হয়নি।
দিকনির্ণয়
অনুগ্রহগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার পর
কৃতজ্ঞতা জানানোর পর
হয়তো তোমার মনে হতে পারে
তাও যেন কম হল।
সদ্যোজাত কুকুরছানাগুলির মতো
তোমার সমস্ত উপহার
ঘরের মেঝেতে রেখে যাচ্ছি।
উপহারগুলি আজ থেকে
তাদের নিজস্ব পথ খুঁজে নিক।
থ্যাঁতলানো
তোমার প্রণয় যেন আজ
তোমার প্রণয় নয়।
দেখি, দীর্ঘ গ্রীষ্মকাল জুড়ে
একটি অনুভূতি কীভাবে থেঁৎলেই যাচ্ছে।
থেঁৎলে যাওয়া এই অনুভূতি
থ্যাঁতলানো ফুলের মতো নয়
কোঁচকানো পোশাকের মতো নয়
দলা-মচা কাগজের মতো নয়।
আরোগ্য
আমরা সামান্য প্রতিরোধ
গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম।
জানি, শত্র“কে খতম করে
কিংবা প্রথা ভেঙে কোনও লাভ নেই।
আমরা কখনোই ফ্ল্যাগ, পোস্টার, ভাষণ
এমনকী বিপ্লবের স্বপ্নের দিকেও তো যাইনি।
তবু দেখতে চাইছিলাম
আমাদের এই ন্যূন প্রতিরোধ থেকে
অল্প অল্প ধোঁয়া উঠে আসে কিনা।
তোমরাও হয়তো খুব মজা পেয়েছিলে
এভাবেই শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারেরা
সামান্য প্রতিরোধের পরামর্শ দেন।
অপদস্থ
অপদস্থ হলে ভালোভাবে
স্নান সেরে নাও
জল গরম থাকলে আরো
ভালো
স্নান সেরে সবচেয়ে
ভালো পোশাকটি পরে নিতে পারো।
রাস্তায় হাঁটতে
হাঁটতে পেছন ফিরে
তাকানোর দরকার নেই
খুব বেশি বন্ধু হতে
যেও-না আবার
খুব বেশি গাম্ভীর্যও
নয়
ছেলেমেয়েদের সঙ্গে
স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করো।
যারা রহস্যের হাসি
হাসে
যারা যেচে দয়া
দেখাতে এগিয়ে আসে
যারা ঘন ঘন বিষয়
পাল্টায়
সবাইকে স্যালুট
জানাতে পারো।
শ্রদ্ধা পেতে পার
এমন জায়গা থেকে,
বুদ্ধি করে
দ্রুত পালানো উচিত।
একা ঘরে বসে যখন
চোখের জল ফেলে যাচ্ছ
তখন হঠাৎ দরজায় কড়া
নাড়ার শব্দ হলে
চোখ মুছে ফেলো।
এই পৃথিবীর দুঃখ
সীমাহীন
এই পৃথিবীর করুণা
অপার।
তামিল জীবন
ডোরবেলগুলো অকেজো হয়ে আছে
তবু কেউ সারাতে যায় না।
বছর দেড়েক হল, বাথরুমের দরজায় ছিটকিনি নেই
তা বলে কারোরই প্রাইভেসি বিপন্ন হয়নি।
পা-ভাঙা চেয়ারে অতিথির অপমান হয়তো হবে না
তবে তার ভারসাম্য অল্প টাল খেতে পারে।
গত সাতদিন ঈশ্বরের সংরক্ষিত এই চেন্নাইতে
আমি ব্রেকহীন হুইলারে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
এসময়েই পাকস্থলীর ঠিক নিচে, বামদিক ঘেঁষে
আমার পুরোনো ব্যথা ফিরে ফিরে আসে
যদি নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি
তবে ব্যথা সামান্য কমিয়ে আনা যায়।
অনেক কিছুই ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখতে হবে
এমনকী আটপৌরে এই তামিল জীবনও।
গোঙানি
সকালে বিছানা ছেড়ে
উঠতেই
এই গোঙানি আমার
সঙ্গে জেগে উঠেছিল।
দ্রুত পোশাক গলিয়ে
নিয়ে
বহু জায়গায় গেলাম
বিভিন্ন চেয়ারে
বসলাম
অজস্র প্রশ্নের
মুখোমুখি হতে হল
কাউকেই আহত না করে
বেশ খুশি খুশি ভাব
দেখালাম
শেষ অব্দি কিছুই না
বুঝে
কথা দিয়ে বিদায়
নিলাম।
যেখানেই গেছি,
কিছুতেই
সেই গোঙানি আমার
পেছন ছাড়েনি।
বারবার আমি তাকে
বোঝাতে চেয়েছি
দুঃখ পাওয়ার কোনো
কারণই আমার নেই।
এ শহরে কেউ যদি
একবার গোঙাতে আরম্ভ করে
আমাদের পক্ষে তাকে
থামানো সম্ভব নয়।
রাতে, ঘুমের ভেতর
স্বপ্নের প্রান্তরে শুয়ে শুয়ে
লক্ষ করছিলাম
সমস্ত গোঙানি,
শস্যের মতোই ঝরে ঝরে পড়ছে।
অনুবাদঃ প্রবুদ্ধসুন্দর কর
Post a Comment