দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের চিঠি
প্রিয় মথ ,
প্রশান্তর হাত ঘুরে তোমাদের ‘মথ’ আমার
কাছে পৌঁছেছে । খরাকবলিত মাঠের মধ্যে বৃষ্টির প্রপাতের মত মনে হোলো তোমাদের কাগজ ;
অনেকগুলি অত্যন্ত সুপাঠ্য কবিতা পড়ে তৃপ্তি বোধ করছি । প্রত্যেকটি কবির একটা কী
দুটো কবিতা চমৎকার ! নাম করছি না ; আলস্যবশত ।
বর্তমানে কলকাতার কবিতায় (তরুণদের)
একধরনের obscurantism চলছে । আমি এ ধরণের অস্পষ্ট কবিতার বিরুদ্ধে ; কোনও কবিতা
পড়ে যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় পাঠের আগ্রহ না জন্মায় , তাহলে তাকে কবিতা বলতে দ্বিধা
হয় । তোমাদের কাগজটি , কেন জানিনা , এর বিরুদ্ধে একটি নীরব প্রতিবাদ বলে মনে হচ্ছে
। ভালো লাগে দেখে , তোমরা অন্ত্যমিল পছন্দ করছো । অন্ত্যমিল থাকলে কবিতা হয় ,
অন্যথা নয় , এমন মনে করা কোনও শিক্ষিত মানুষের থাকতে পারে না , আমি জানি । কিন্তু
এখন অনেক কবিতাই যে অন্ত্যমিলহীন ; এর উৎস কি কবিতার উদ্গিরীত অগ্নি , না মিল
দেওয়ার অক্ষমতা ; রবীন্দ্রনাথের মসৃণ ছন্দচেতনা তো সত্যেন্দ্রনাথের ঝুমঝুমি নয় ,
তা আমরা সকলেই জানি । একসময় মিল মিল করে কবিতা হয়ে উঠেছিল লঘু পদ্যধর্মী ; সেরকমই
মিলহীনতার এক নাথুসংকট হয়ে উঠেছে বর্তমান কবিতা । কবিতাকে কবিতার কাছে ফিরতে হবে ।
তাছাড়া আর একটি কথা আমার সম্প্রতি মনে উদিত
হচ্ছে যে সত্যিই কি আমাদের কবিতা কোথাও পৌঁছেছে ? কারা এই কবিতার পাঠক ; যখনই কোনও
কবিকোলাহলে (পড়ো কবিসম্মেলনে) যাই দেখি সার সার উদভ্রান্ত মুখ ; কেউ কেউ এমন বলবে
কি যে এরা সকলেই কবি ? তাহলে কবিতাচর্চা কি একটা esoteric ব্যাপার !
কয়েকদিন আগে খোঁড়াতে
খোঁড়াতে গোঙাতে গোঙাতে (কলকাতার ভিড় হেতু) পৌঁছালাম এরকম একটি কোলাহলে । সেখানে
কয়েকজন তরুণ কবি জড়ো হয়েছেন ; তাঁরা কবিতা পড়ছেন ;অন্তত সেরকম দাবি তাদের । কিন্তু
তাঁরা কী পড়লেন , কি তাদের মানে আমার মাথায় বিন্দুমাত্র প্রবেশ করল না ; তবে আমার
কয়েকজন বন্ধুও সেখানে এসেছিলেন , তাঁদের সঙ্গে দেখা হোলো , চা সিগারেট খাওয়া হোলো
...এটুকুই ... তবে কেউ কেউ কিন্তু ভালো কাজ করছেন , যেমন কবি গৌতম মণ্ডল । তাঁর
কাগজের একটি অসম্ভব ভালো সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে সত্তর দশকের কবিতা নিয়ে । এ জন্য
তাঁকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে ।তাঁর পরিশ্রম ও নিষ্ঠাকে আমি অবশ্যই শ্রদ্ধা করি ।
অবশ্য সত্তর নিয়ে কমল অসম্ভব সুন্দর একটি সংকলন প্রকাশ করেছেন ।
তোমরা ভালো থেকো ।
পত্রিকা প্রকাশ প্রথমদিকে মনে হয় অর্থহীন ; কিন্তু কাগজ ধারাবাহিক চেষ্টার একটা
অমূল্য সংকেত আছে !সন্দীপনকে একজন বলেছিল ‘ আপনার ক্রীতদাস ক্রীতদাসীর কোনও তুলনা
হয়না ’ । এর উত্তরে সন্দীপন নাকি বলেছিলেন , ‘ আজ থেকে ৪০ বছর আগে তা বললি না কেন
রে শালা !’
আমি তাই বহু আগে
থেকে বলে রাখছি ,তোমাদের কবিতার কাগজ প্রকাশ একসময় অর্থময় হতে পারে ।ভালবাসা জেনো
।
দেবপ্রসাদ
মুখোপাধ্যায় ২৬।০৬।২০১৫
Post a Comment