বিলি কলিন্স-এর কবিতার অনুবাদঃ কুন্তল মুখোপাধ্যায়



বিলি কলিন্স

অসুবিধা নেই মৃত্যু

অসুবিধা নেই
মৃত্যু
আমি তো অভ্যস্ত , প্রতিদিন
শেষ বিকেলের আলো দেখি
শেষ হয়
গোধূলির ভিতরে , কীভাবে
গাছেরা কালো হয়ে যায়
আর ঘরে ঘরে
হলুদ আলোরা জ্বলে ওঠে
তারপর কিছু পিয়ানোর স্বর
রাতের খাওয়ার আগে
কিছু হুল্লোড়
আমি জানি মরে গেলে
এই ঘর
আর থাকবে না
আর কালো কালো জানালায় নেই
আমার ফরসা জামাটার
ছায়াছবি
বিছানায় রাত্তিরে আমি
শয্যাহীন
আর মোমবাতিটাও নেই
নেই সেই রোমহর্ষক গল্প, বই
স্বপ্ন
যা আমায় বিস্ময় জোগাত
ঠিক কী যে ছাই ভাবছিলাম
সেই মারাÍক লাইনগুলো
শুরু হয়েছিলো যে সময়

সান্ত্বনা

এই গরমের ছুটিতে ইতালি যাওয়া হল না , কী ভাল হল
পুরোনো নগর আর উষ্ণ শৈলশহরে ওঠা হল না , কী ভাল হল
কী ভাল লাগছে এই পথে পথে ভেসে বেড়াচ্ছি ঘুরে বেড়াচ্ছি চেনা রাস্তায়
ওই যে সাইনবোর্ড আর ওই যে ট্রাফিকসাইন বুঝতে পারছি বেশ
কী ভাল লাগছে ওই হাত নাড়ছে আমার দেশের লোকজন ।
মঠ নেই , ভাঙাচোরা যে-কোনো বিখ্যাত ফ্রেস্কো নেই
বিশাল গম্বুজ নেই পুরনো রাজাদের নাম পরপর মনে রাখবার নেই
ফোঁটায় ফোঁটায় জলঝরা অন্ধকার গুহাঘর , পাথরের সমাধির
সামনে দাঁড়াবার নেই নেপোলিয়নের ছোট্ট বিসনা এলবায় ,
কাচের উপর থেকে সাধুবাবাদের হাড় দেখারও দরকার নেই আর
কী ভাল এই ঘর এই বাগান এই চারপাশ ঘুরে বেড়ানো !
বিশাল স্তম্ভ , খিলান আর রাজার কক্ষের কাছে নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবা নেই
তবুও কুঁচকে যাওয়া ম্যাপ আর প্রবাদের বইয়ের ভিতরে মাথা ?
ক্ষুধার্ত একচোখে দৃশ্য , দৃশ্যাবলী ? লহমায় লহমায়
সমস্ত পৃথিবী খেতে ইচ্ছে হয় ?
বরফের অনুবাদ কী যে ছাই ভাবতে ভাবতে ধীরে কফিশপে
নেমে যাওয়ার চেয়ে
নীচের দোকানে সেই ... সেই যে মেয়েটি তার সাথে আজ দেখা হবে
(ওর নাম ডট )তারপরে ভেসে যেতে হবে সকালের খবরের স্রোতে
ভাষায় বন্ধনহীন
প্রবাদের নদীরা দৌড়াবে তীব্রবেগে , ব্যজস্তুতির রাস্তায় !
আর প্রাতরাশ শেষ করে মালিকের কাঁধ ধরে ছবি তুলবার কথা ভেবে
কাউকে খুঁজতে হবে না আর কী ভাল কী ভাল হবে
হতভম্ব হবো না বিল আর পত্রিকার রেকর্ড দেখতে দেখতে
মুগ্ধ হবো না বেশ কীভাবে সূর্য নেমেছিল জানালায় আর
অনেক তো হলো চলো এবার গাড়িতে উঠে যাই
যেন-বা সে গাড়ি নিজে মহান ইংরাজি ভাষা আহা
ভাষার তীব্র হর্নে নীচের রাস্তার দিকে যায়
যে রাস্তা যাবে না রোমে , এমনকি বোলগনায়ও নয় ।
ফিরিয়ে নিলাম

নিস্তব্ধতা

মানুষের আকস্মিক নীরবতা
মাঠে অচঞ্চল খেলোয়াড়ের মাথার উপরে
আর অর্কিডের না-বলা কথা
মেঝেয় ভেঙে পড়ার আগে ...
পতনশীল ফুলদানির নিস্তব্ধতা
আর বেল্টের নিস্তব্ধতা যখন সেটা শিশুটিকে আঘাত করছে না ।
একটা কাপ , তার জলের নীরবতা
নিস্তব্ধতা চাঁদের
সূর্যের চিৎকার থেকে বহুদূরে একটা নীরবতার দিন
নিস্তব্ধতা , যখন তোমাকে বুকে টেনে নিই ,
মাথার উপরে যে জানালা তার নিস্তব্ধতা
নিস্তব্ধতা যখন তুমি উঠে চলে যাও
আর সকালের এই নিস্তব্ধতা
যা আমি আমার কলম দিয়ে ভেঙে দিলাম
একটা নিস্তব্ধতা যা সারারাত আমি জড়ো করে রেখেছিলাম
অন্ধকার ঘরে যেন হিম পড়ছে -
একটাও শব্দ লেখার আগে যে নিস্তব্ধতা
আর এখন এই দীন নিস্তব্ধতা
অনুবাদঃ কুন্তল মুখোপাধ্যায়

No comments

Powered by Blogger.