উহিনী উড়ানঃ রানা রায়চৌধুরী



ক্যারাম খেলা

প্রফেসর-দম্পতির ক্যারাম খেলার কায়দা
আমাদের আজও শেখা হল না। বিশেষ করে
রেড। কোন দূর জেলা থেকে ট্রেন টপকে, ভেণ্ডার
টপকে, চ্যানাচুর-লিপষ্টিক আর বাদাম টপকে
প্রফেসর-দম্পতি ঠিক রেড নিয়ে যাবেন। আমি
ভাবি। আমরা যারা কল্যাণীর, বসিরহাটের-
তারা আজও আমগাছের নীচে টেবিল উঁচু করে,
মন উঁচু করে শিশুর মতো ক্যারাম খেলি-
রেড আমাদের লাল খেলনা; রেড আমাদের
অধিকার, রেড আমাদের সোজাসাপ্টা কবিতা-পত্রিকা।
ঐ তো সজল সাঁকো ডিঙিয়ে সোজা রেড ফেলল।
কিন্তু প্রফেসর ফেলেন টাঙ্কি করে
এ্যাঙ্গেল করে- হেব্বি পেঁচিয়ে, সাহিত্য
আকাদেমি-বঙ্গসম্মেলন ঘুরে রেড ঠিক জালে
পড়ল –যেন ভোরবেলা নতুন বউয়ের জবাফুল
চুরি হল বাগান থেকে; চোর কে কেউ জানে
না- সে আবছা, সে হলদি নদীর তীর;
কিন্তু সংকলনে নাম আছে- এঁরা মঞ্চে আছেন,
চায়ের কাপে আছেন, এঁরা সম্পাদকীয়তেও
আছেন- অথচ এঁরা চোর নন্‌ খুনি নন্‌- নামি
ক্যারাম খেলোয়ার মাত্র!

অন্ধকারের নৃত্যনাট্য

তুমি, তুমি বালক ইস্কুলের পড়া করছিলে,
কাল দিদিমণি ধরবে, বলবে, ‘আট লাইন মুখস্থ বল,
বল কবির নাম-সহ’- তুমি মুখস্থ করেছিলে
শঙ্খ ঘোষের ছড়া- তুমি ক্লাস ফোড়, তুমি
পুকুরের শান্ত জল- মাকে জিজ্ঞেস করলে,
গাছেদের নৃত্যনাট্য কী? ‘শরৎমেঘে দেখতে পেলাম
রবীন্দ্রনাথকে’ –এর মানে কী? তোমার মা তখন
ভাত বসিয়েছেন মাটীর উনুনে, এমন সময় সত্যিই
তুমি অন্ধকারের নৃত্যনাট্য দেখলে, ভয় পেলে -
রাগি টেরিলিন শার্ট তোমার দু-ঠ্যাং ছিঁড়ে ছুঁড়ে
দিল হলদি নদীতে-, অথচ তুমি হলদি পিসি
বলে ডাকতে... এখন জলের নীচে তুমি কী করছ
বালক? ও মাতৃহারা, আলোহারা বালক –শঙ্খবাবু
তোমায় জলের নীচে খুঁজছেন – তুমি কি
কাঁদছ? দোষ দিচ্ছ অন্ধকারের নৃত্যনাট্যকে?
ভয় কীসের, তোমার ঘরে না সিংহ বাঁধা আছে?
তোমার ঘরে আ রবীন্দ্রনাথের ছবি আছে?

অঙ্ক

আমি এখন আর কিচ্ছু জানি না,
শুধু জানি সেইরাত্রে তুমি কালো বউ
কেঁদেছিলে মাটির তলায়-

শুধু জানি সেই রাত্রে তুমি কালো মেয়ে
গেয়েছিলে একা একা শোকের গলায়,
বুকের আঁচল সরে যায় কেন
আত্মীয়সভায়? অঙ্ক নাচতে থাকে

আমি এখন আর কিস্যু জানি না -
শুধু জানি,
শিশুদের ছেঁড়া মুণ্ডু ইস্কুলেতে যায়, অঙ্ক নাচতে থাকে


দু-চারজন বুদ্ধিজীবি
অঙ্ক কষে খায়? খাক্‌গে যাক, খাক্‌গে যাক!
ছেঁড়া মুণ্ডু তাতে তোমার কী? অন্ধকারে অঙ্ক নেচে ওঠে

No comments

Powered by Blogger.