পল্লব ভট্টাচার্য
পল্লব ভট্টাচার্যের কবিতা
·
হাতের যে আঙুল অন্যের দিকে উঁচু হয়ে ওঠে ,তাকে নিজের
দিকে ঘুরিয়ে ,একজন গ্রামীণ মহিলা দুই পা ঢুকিয়ে দিলেন অসহ্য উনোনে । পোড়ালেন , আর পুড়িয়ে পুড়িয়ে আমাদের ফোটাতে চাইলেন নরম ভাতের মত , মাটির হাঁড়িতে । হাঁড়ি ফেটে , দুয়েকটি গজগ্যাড়ে চাল আধপোড়া আধসেদ্ধ হয়ে , এই যে ছড়িয়ে আছে ছাই ও
জঞ্জালে , তাদের কুড়িয়ে , ধুয়ে ,শুকোতে দিয়েছে মেঘ , শরতের রোদে ।
সিদ্ধ না হওয়া অব্দি মেঘে রোদে , রোদে মেঘে , বারবার পুড়িয়ে ভিজিয়ে , কিছু
ঘুম কিছু জাগরণে , দুই পা ছড়িয়ে বসে সৎ আর অসতের মা , শালিখ তাড়িয়ে যাচ্ছে-হুশ যা
–হুশ যা
·
কাকের উচ্ছিষ্ট হয়ে , এতটা নিচে
পড়ে যাওয়ার আগে , অজানাই ছিল শরীরের ইতিহাস , ঘাম ও দুর্গন্ধ । তবু কিছু আনমনা
গুচ্ছ কাশের স্মৃতিও কি থাকে না কোথাও ?
ভাবি ,সেই শীর্ণ নদীর পাশে রোজ ভোরবেলা যারা মলত্যাগ করে
চলে যায় , তারা কি জানে না , রোদ পড়ে এলে , শরতের বোনেরা এসে , জলে পা ডুবিয়ে বসে
গল্পগাছা করে চলে যাবে , কাশের গুচ্ছে হাত রেখে ? তবে মানুষের ভোর ঠিক এরকম কেন ?
এই প্রশ্নে , পাগলেরা হেসে ওঠে কিছুক্ষণ , তারপর বুকে হাত
রেখে ওপরে তাকায় ।সন্ধ্যা হয় । বুজে আসে চোখ । তাদের আবিষ্ট হাত দুইটি আঙুল মেলে ভেসে থাকে আকাশের দিকে । বিস্মৃত তারার আলো একটি আঙুল বেয়ে নেমে এসে , অন্য আঙুল বেয়ে উঠে যায় আবার
আকাশে ।
ঠোঁট মেলে , অবাক কাকেরা ডেকে উঠে ।
·
দু’চোখ বন্ধ করে অন্য এক চোখে , অই কালো , অই জবাফুল ,
আমার ফুটে ওঠা দ্যাখে । পাহাড়ের আড়ে , অদ্ভুত অ-দৃশ্য এই মুহূর্তটি ঘিরে , জ্বলে
উঠে সমস্ত উনোন ।যতই কদম ভাবি নিজেকে এখন , আমিও ইন্ধনমাত্র ,দগ্ধ হই , উনোনে,
আগুনে । মেঘে মেঘে দূরদেশে গন্ধ ছড়ায় ।
যারা উড়ে আসে , তারা গন্ধপাগল নয় , অঙ্গারভূক কিছু কালো
। ঠুকরে ঠুকরে খায় ; ক্রমশ গরম হয়ে ফিরে যায় যার যার দেশে ।
ঠান্ডা বিবর্ণ এক পাহাড়ের আড়ে ; দেশ নেই , শুধু এই ফুটে
ওঠাটুকু নিয়ে নিজেকেই জীর্ণ করি প্রাণোচ্ছল বর্ষার স্বাদে ।
·
গিলতে যেমন কষ্ট , উগড়াতেও ততটাই লাগে ; এত বিষকাঁটা এই ভাষার ভেতর !
তবু পথে পথে কুলো ঝেড়ে , একজন বৃদ্ধা বিধবা তার খুদকুঁড়ো উড়িয়ে চলেন । চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই ; আমরা জানি না তিনি কোথায় যাবেন । ভাষার ছোবড়া আঁশ ঝেড়ে ফেলে , হয়তো নিখাদ কিছু কখনও পাবেন । এইসব ভাবি , আর পথ থেকে সমস্ত কুড়াই । টেরই পাই না তার পেছনে পেছনে হেঁটে কতদূর চলে আসা গেছে । রাত হয়ে গেলে আজ , হিজল গাছের নীচে রূপকথা মেখে রাখা আঁচলের খুঁটে , ব্যাঙ হই , প্যাঁচা ও বাঁদর হই , গাছে গাছে ফুটে উঠি ফুলে ।
ফুলের আগুন জ্বেলে , এইসব খুদকুঁড়ো সিদ্ধ হয় । দু’য়েক গরাস আমাদের মুখে তুলে দিয়ে , বৃদ্ধা বিধবা তার কুলো নিয়ে হাঁটতে থাকেন ।আমরা গিলতে চাই , আটকে থাকে গলার ভেতর । উগড়াতে পারি না ।
বিষকাঁটা বিঁধে যাওয়া জন্তুর মত , ভাষার ভেতর দিয়ে ছুটতে ছুটতে শুধু ক্ষত গাঢ় হয় । কিছুতেই খুলতে পারি না ।
Post a Comment